খাদিজাতুল কুবরা : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাবেক ওসির বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা রিটকারি ব্যারিস্টার সুমনের সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকার।
আলাপচারিতার শুরুতেই তার আতিথেয়তা মুগ্ধ হওয়ার মত। কথা বলতে বলতে যাওয়া হলো হাইকোর্টের তিন তলায় থাকা সাফিন ক্যাফেতে। বসার শুরুতেই সম্প্রতি নুসরাত হত্যা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের শাস্তির বিষয়ের সফলতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলে উঠলেন ভাই, বইলেন না আর- ওসি মোয়াজ্জেমের সাজা হওয়ার পর আমার এলাকার লোকেরা মনে করে আমি অনেক বড় ব্যারিস্টার। কোথায় রাখবে, কি করবে তারা দো-টানায় পড়ে যায়। আসলে আমি নিতান্তই একজন অন্যায়ের প্রতিবাদকারী একজন সচেতন আইনজীবী। কোন অন্যায় কাজ দেখলে আমার বিবেক বাঁধা দেয়, তাই বাঁধা আসবে জেনেও অসহায় মানুষটির পক্ষ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি নিজের বিবেকের তাড়নায়। দরকার হলে নিজেই আইনজীবী হয়ে লড়াই করি ন্যায়-বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায়। নাস্তার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি সজোড়ে বলে উঠলেন- ভাই আমি তো ডায়েট করা শুরু করেছি, তাই দুপুরের খাবার হিসেবে ফরমালিন মুক্ত ফল-মূলকে বেছে নিয়েছি। তালিকার মধ্যে কমলা, পেয়ারা, আঙুর আমার দুপুরের রোজকার রুটিনের প্রধান খাবার।
দেশে এতো গণমাধ্যমকর্মী, সমাজকর্মী থাকতে আপনি কেন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি -অসঙ্গতি কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন- তিনি বলেন, আমি একটা সময় এতোটাই অসহায় ছিলাম যে, আমার বাবার জানাজায় আসার জন্য আমার টিকিটের টাকাটা পর্যন্ত ছিলো না। সেই সময় মোবাইল ফোনে আমি ফোন দিয়ে বলি আপনি ফোনটা ধরে রাখেন আর আমাকে বলুন আমার বাবার লাশটা এখন কোথায় আছে? প্রত্ত্যুতরে তিনি বলে, ’এখন কবরের পাশে আছে, নিচে নামাচ্ছি মাটি দিচ্ছি’। এ ভাবেই আমি আমার বাবার দাফনে অংশ নেই। এই ব্যাপারটা আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছে। তখন থেকেই আমি সংকল্প করেছি যে টাকার পিছনে ছুটবো না। সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। সে থেকে নিজেকে যেভাবে পারি অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ ফেসবুক লাইভের ব্যতিক্রমী পন্থায় জানান দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে সায়েদুল হক সুমনের পেইজে ২০ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে এবং তারা সকলে তাদের মন্তব্য দিচ্ছে।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে তিনি ২১টি ব্রিজ ও ৫টি রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ব্যক্তিগত অর্থ ও শ্রমের দ্বারা সংস্কার করেছেন আরো ৪০টি রাস্তা। ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে শিশুদেরকে ১ হাজার খেলার সামগ্রী বিতরণ, ৫টি খেলার মাঠ মেরামত ও বঙ্গবন্ধুর নামে ৫টি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনসহ চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা ও প্রতি বছর শীতবস্ত্র বিতরণ করেন সুমন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ছেলে সায়েদুল হক সুমন। বাবা-মায়ের ৬ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাবা সাধারণ একজন ব্যবসায়ী এবং মা একজন গৃহিনী। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা এবং এসএসসি পর্যন্ত চুনারুঘাটের মাটিতে কেটে দেওয়া। এরপর ঢাকায় এসে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঢাকার কলেজে এইচএসসি এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। বিবিএ, এমবিএ পড়ার পরও তার মনে হয়েছে দেশের জন্য কাজ করতে গেলে স্বাধীন একটা পেশা প্রয়োজন। সেই স্বাধীন পেশার তাগিদে আইন বিষয়ে পড়ার উপর ঝুকে পড়া এবং ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখা। অবশেষে লন্ডনের বার অ্যাট ল সম্পন্ন করে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়।